নামাযের পর দু’আ করা কি বিদ’আত?
প্রশ্ন : ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ পত্রিকায় ফরয নামাযের পর ইমাম-মুসল্লি মিলে মুনাজাত করাকে বিদ’আত বলে সাব্যস্ত করেছে। প্রশ্নোত্তরসহ তা উদ্ধৃত হলো,
“(প্রশ্ন নং : ২২৩৫ মাসিক মুঈনুল ইসলাম) ফরয নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত কি না? বিদ’আত না হলে যখন মুনাজাতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়, তখন করণীয় কী?
সমাধান : হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবায়ে কেরাম ও আয়্যিম্মায়ে মুজতাহিদীন তাদের স্ব স্ব জীবনে অসংখ্য অগণিত নামায জাম’আতের সাথে আদায় করেছেন। কিন্তু তাঁরা কখনো নামাযান্তে ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে প্রচলিত নিয়মে মুনাজাত করেছেন এ ধরনের একটি দুর্বল সনদের হাদীসও পাওয়া যায় না। তারা যে কাজ শরীয়ত মনে করে আমল করেননি তা নিশ্চিত নবাবিষ্কৃত তথা বিদ’আত। সুতরাং ফরয নামাযান্তে ইমাম-মুক্তাদী মিলে মুনাজাত করা বিদ’আত বিধায় তা সর্বোতভাবে বর্জনীয়। “আল ই’তিসাম ১/১৯০-২৮৮” আহকামুদ দাওয়া আল মুরাওয়াজাহ ২৩-৫০ পৃ: (মাসিক মুঈনুল ইসলাম, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮)”
কিন্তু অত্র মাসআলার পুরোপুরি বিপরীত দারুল উলূম দেওবন্দের মুঈনে মুফতী জনাব মাওলানা ইদ্রীস সাহেবের লিখিত কিতাব “ইজতেমায়ী দু’আ কি শরয়ী হাইসিয়াত” নামক কিতাবে ফরয নামাযান্তে ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে অনেক হাদীস ও যৌক্তিক দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছেন। এখন হাটহাজারী মাদরাসার ফতওয়া মতে ফরয নামাযান্তে মুনাজাত করা বিদ’আত বিধায় ছাড়া প্রয়োজনীয়। আর মাওলানা ইদ্রিস সাহেবের ফতওয়া মতে মুনাজাত করা দরকার, যেহেতু তা হাদীস শরীফে আছে। এখন আমরা মধ্যখানে মহাবিপদে পড়েছি। তাই এর সঠিক দিকটি জানালে আমরা বিশেষভাবে উপকৃত হব।
উত্তর : দু’আ বড় ইবাদত। হাত তোলা দু’আর একটি আদব। ফরয নামাযের পর দু’আ কবুল হওয়ার সময়। এ কথাগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ধরনের দু’আতে ইমাম-মুক্তাদীর মিল ও একত্রিত হওয়া আপত্তিকর নয় আবার বাধ্যতামূলকও নয়। কিন্তু বর্তমানে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন নামাযের পর একত্রে মুনাজাত ও দু’আ একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। কেউ না করলে তার সমালোচনা করা এরই জ্বলন্ত প্রমাণ। একটি ঐচ্ছিক বিষয়কে অপরিহার্যের রূপ দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে কম অপরাধ নয়। এ অপরাধ থেকে মুসলিম সমাজকে বাঁচানোর জন্যই কিছু অভিজ্ঞ মুফতীয়ানে কিরাম নামাযের পরে সম্পূর্ণরূপে সম্মিলিত দু’আ পরিহার করার ফতওয়া প্রদান করেন। তাঁদের এ ফতওয়া শরয়ী প্রমাণের আলোকে ভুল বলা যায় না। বরং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে সহীহ বলা যায়। পক্ষান্তরে কাজে বা কথায় বাধ্যতামূলক মনে না করাবস্থায় যাঁরা মুনাজাত করেন তাঁদের এ কাজ নিশ্চয়ই শরীয়ত সমর্থিত। তাই এটিকে বিদ’আত বলে আখ্যা দেওয়াও ঠিক নয়। সুতরাং একত্রে মুনাজাত যাঁরা করেন তাঁদের উচিত বাস্তব বিষয় সম্পর্কে মুসল্লি সমাজকে অবগত করানো এবং কখনো কখনো মুনাজাত না করে এর সঠিক অবস্থান পরিষ্কার করা। তবে ফিতনা যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। (৬/৮৯২/১৪৫৯)
Tag:দু’আ