ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পরিচয় ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তির ইবাদত
প্রশ্ন : (ক) ধর্মনিরপেক্ষতা ইসলামের মৌলিক আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক কি না?
(খ) ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীর সালাত, রোজা, হজ ও যাকাত কি আখেরাতে কোনো কাজে আসবে না?
উত্তর : ধর্মনিরপেক্ষতা বুঝতে হলে প্রথমে ধর্ম বুঝতে হয়। আর ধর্মের মর্ম কথা হলো : মহান আল্লাহর প্রতি যথার্থ বিশ্বাস রেখে জীবনের সর্বস্তরে আন্তরিকতার সাথে তাঁর বিধিবিধান পালন করা। ধর্মের পরিচয়ের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মহান স্রষ্টার প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে তাঁর বিধানগুলোকে জীবনের কিছু ক্ষেত্রে পালন আর কিছু ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা বস্তুত সর্বক্ষেত্রে লঙ্ঘন করার শামিল। আর আল্লাহ তা’আালার প্রতি পূর্ণ অবিশ্বাসী হয়ে জীবনের সর্বস্তরে তাঁর বিধান লঙ্ঘন করার নাম হচ্ছে ধর্মহীনতা, যা ধর্মনিরপেক্ষতার ফলাফল।
আরবী ভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতাকেالعلمانیة বলা হয়। যার অর্থ হচ্ছে, فصل الدین عن الدولة রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে ধর্মকে আলাদা করে দেখা। জীবনের অন্যান্য স্তরে ধর্মীয় অনুশাসনের দাবি করে রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন অস্বীকার করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। তাই পরোক্ষভাবে এটাকে ধর্মহীনতা ছাড়া কিছু বলা যায় না, যা সম্পূর্ণ ইসলামী মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী বা কুফরী মতাদর্শের অন্তর্ভুক্ত। জীবনের প্রথম স্তর ব্যক্তি জীবন, আর উচ্চ স্তর রাষ্ট্রীয় জীবন। ধর্মকে জীবনের ব্যক্তি পর্যায়ে স্বীকার করা আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অস্বীকারের অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর বিধানসমূহ জীবনের এক স্তরে যথার্থ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যথার্থ নয়। এমন আক্বীদায় বিশ্বাসী সত্যিকারার্থে মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে না ।
হ্যাঁ, যদি কোনো মুসলমান রাষ্ট্রীয় জীবনে আল্লাহর বিধানসমূহকে যথার্থ বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও দুনিয়ার লোভে, রাজনৈতিক স্বার্থে শয়তানের প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা অসম্ভব মনেকরতঃ তা উপেক্ষা করে রাজনীতি করে একেও অন্য অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলা যায়, যা জঘন্যতম অপরাধ ও গোনাহ হলেও ধর্মীয় শাসনব্যবস্থাকে যথার্থ বলে বিশ্বাস পোষণ করায় তাকে কাফের বলা চলে না। অবশ্য ফাসেক, পথভ্রষ্ট ও জঘন্য পাপিষ্ঠ বলে গণ্য করা যায়।
আমাদের দেশে সম্ভবত উভয় ধরনের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে, সকলের একই হুকুম হবে না। তাই যে যে ধরনের আদর্শে বিশ্বাসী তার ওপর সে হুকুম বর্তাবে, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের কোনো গ্রুপকেই সঠিক ও পরিপূর্ণ ঈমানদার বলা যায় না। তাদের মধ্যে ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিদ্যমান নেই। এদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বলেন, افتؤمنون ببعض الکتاب وتکفرون ببعض তোমরা আল্লাহর কিতাবের একাংশ মানবে, আর অপরাংশ অমান্য করবে? এহেন জঘন্য পাপের অবধারিত শাস্তি পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা, পরকালীন জীবনে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের কঠিন আজাবে। [বাকারা ৪৫]
(ক) উপরোক্ত আলোচনার দ¦ারা ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা ও বিধান সুস্পষ্ট হলো। জেনেশুনে স্বজ্ঞানে এ ধরনের ভ্রান্ত মতবাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা জঘন্য অপরাধ ও গোনাহের কাজ। ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলাম উভয়ের মাঝে রয়েছে আক্বীদাগত পার্থক্য। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিশ্বাসের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
(খ) এ ধরনের আক্বীদা বিশ্বাসের সাথে নামায রোযা, হজ, যাকাতসহ অন্যন্য হুকুম-আহকাম পালনকারী ব্যক্তি দুনিয়াতে দায়িত্বমুক্ত হলেও আখেরাতে আল্লাহ তা’আলার দরবারে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারী হয়ে অল্প আমল করলেও নাজাতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ!
উপসংহার :
প্রকৃত মুসলমান কোনো অবস্থাতেই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসী হতে পারে না। সর্বোপরি এ ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জানমাল ব্যয় করে সংগঠন করা কোনোভাবেই বৈধ নয়। কেউ যদি ভুলবশত এ ধরনের মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে, তবে তাকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে খাঁটি দিলে তাওবা করতে হবে এবং তাদের সাথে সম্পর্কের ইতি টানতে হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দানকরতঃ নাজাতের ব্যবস্থা করে দিন। আমীন! (১৩/৩০৩/৫২৪২)
Tag:ধর্মনিরপেক্ষতা