দ্বীনি স্বার্থে মহিলা মাদ্রাসা!
প্রশ্ন : আমরা সকলেই জানি, দ্বীনি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমান প্রগতিশীল বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষতা, নাস্তিকতাসহ আধুনিক শিক্ষার ছড়াছড়িতে মুসলিম সমাজ তথা মুসলিম মা-বোনেরা আজ দিশেহারা। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব অনেক কম। তাদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তারা ইসলাম বিবর্জিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে না চলে বিধর্মীদের আদর্শে আদর্শিত হয়ে বহু অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে আমাদের অনেক আলেম মা-বোনদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ করতে দেশে বহু মহিলা কওমী মাদ্রাসা স্থাপন করে কোরআন-হাদীস তথা ধর্মীয় জ্ঞানদানে আত্মনিয়োগ করছেন। যা মুসলিম জাহানে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। আর এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটি একটি মহৎ দ্বীনি কাজ। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু আলেম-উলামা অনেক সময় মৌখিকভাবে বলে থাকেন, এ ধরনের মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে শিক্ষা প্রদান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। কাজেই এ ব্যাপারে আমরা শরীয়তের সঠিক সমাধান জানতে আগ্রহী। আপনাদের জ্ঞাতার্থে প্রচলিত কওমী মহিলা মাদ্রাসার নিয়মাবলি নিম্নে প্রদত্ত হলো :
১. শিক্ষার্র্থীরা সাধারণত মাদ্রাসার অভ্যন্তরে অবস্থান করবে। পুরুষ শিক্ষকগণ পর্দার বাইরে লাউড স্পিকারের সাহায্যে অথবা মৌখিকভাবে শিক্ষাদান করে থাকেন। যাতে করে পুরুষ শিক্ষকদের ছাত্রীদের দেখার কোনো সুযোগ যেমন নেই, তেমনি মেয়েদেরও শিক্ষককে দেখার কোনো সুযোগ থাকে না।
২. এখানে পর্দা রক্ষা বাধ্যতামূলক, কোনো মতেই লঙ্ঘন করা হয় না।
৩. আবাসিক ছাত্রীরা শুধুমাত্র মহিলা শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে মাদ্রাসার অভ্যন্তরে অবস্থান করে।
৪. অনাবাসিক ছাত্রীরা বাড়ি থেকে পর্দার সহিত আসা-যাওয়া করে।
উত্তর : মুসলিম নারী সম্প্রদায়ের জন্য জরুরি দ্বীনি শিক্ষার ব্যাপারে শরীয়তে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগ থেকে মহিলাদের ইসলামী শিক্ষা অর্জনের প্রচলন রয়েছে এবং তার পদ্ধতি হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত মহিলা মাদ্রাসার আকারে নারী সমাজে দ্বীনি শিক্ষার যে পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, এর কোনো ভিত্তি ইসলামের স্বর্ণযুগ থেকে পাওয়া যায় না। স্বয়ং ইমাম বুখারী (রহ.)ھل یجعل للنساء یوما علی حدۃ فی العلم দ্বারা অধ্যায় কায়েম করেছেন। তিনি লক্ষাধিক ছাত্রকে বুখারী শরীফ শিক্ষা দিয়ে মুহাদ্দিস বানালেও মহিলাদের জন্য কোনো মাদ্রাসা কায়েম করেননি। তাই এই হাদীস দিয়ে মহিলা মাদ্রাসা প্রমাণের বৈধতা মেলে না। শুধু মৌখিকভাবে বাড়ির নিকটতম স্থানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত বুজুর্গানে দ্বীনের নিকট থেকে দ্বীনের জরুরি আলোচনার জন্য পূর্ণ পর্দার সাথে একত্রিত হওয়াই প্রমাণিত হয়। অতএব বর্তমান ফিতনার যুগে নবাবিষ্কৃত মহিলা শিক্ষার পদ্ধতি মহিলা মাদ্রাসার ভিত্তি কোরআন, হাদীস, মুহাদ্দিস, মুজতাহিদগণের কোনো যুগে না পাওয়া যাওয়ায় পর্দানশীন নারীদেরকে মহিলা মাদ্রাসার নামে ঘর থেকে বের করা অমুসলিমদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সাহায্য করার নামান্তর। একে অবৈধ বলে প্রদেয় হক্কানী আলেমগণের ফতওয়াকে আমরা সঠিক মনে করি। বর্তমানে কেউ ফিতনামুক্ত মহিলা মাদ্রাসা দাবি করলে তা নিছক দাবি ও অবাস্তব কথা হবে। আর অবাস্তবের ওপর ফতওয়া দেওয়া যায় না। শরীয়ত পরিপন্থী যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাই, তা মহিলা মাদ্রাসার নামেই হোক বা সাধারণ মাদ্রাসার নামে হোকÑএ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্যই গোনাহের কাজ হবে। গোনাহের কাজে যে যেই পরিমাণ জড়িত থাকবে, সে সেই পরিমাণ গোনাহগার হবে। (১১/৫০৫/৩৬২৩)