চার তরীকার গোড়াপত্তন ও পীর ধরে জান্নাতে গমন
প্রশ্ন : চার তরীকার গোড়াপত্তন কখন-কার নিকট হতে শুরু হয়? বর্তমান যুগে পীর ধরার হুকুম কী? যারা বলে হক্কানী পীরের হাতে বাইআত হও নইলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। তাদের কথা কতটুকু সত্য? হক্কানী পীরের কোনো বিশেষ নিদর্শন থাকলে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
উত্তর : ইসলামের শুরুলগ্নে ইলমে হাদীস ইলমে ফিক্বাহ ইত্যাদি পৃথকভাবে ছিল না। পরবর্তীতে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম প্রয়োজনের ভিত্তিতে কোরআন-হাদীস থেকে মাসআলা বের করেছেন, যাদের থেকে চারজনকে সকলেই শরীয়তের দিশারি হিসেবে ইমাম মেনে নেয়। তদ্রƒপ আধ্যাত্মিক জগতেও মানুষ চারজন সুফী দরবেশকে পথপ্রদর্শক হিসেবে মেনে নেয়, এই চারজনের দিকে নিসবত করে চার তরীকা বলা হয়। আর তাঁদের থেকেই চার তরীকার গোড়াপত্তন হয়। হযরত মুঈন উদ্দীন চিশতী (রহ.) থেকে চিশতীয়া তরীকা শুরু হয়। হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) থেকে কাদেরিয়া তরীকা শুরু হয়। হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দী (রহ.) থেকে নকশবন্দিয়া তরীকা শুরু হয়। হযরত শিহাব উদ্দীন সহরাওয়ারদী (রহ.) থেকে সহরাওয়ারদিয়া তরীকা শুরু হয়।
আত্মশুদ্ধি প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জরুরি। বর্তমানে আত্মশুদ্ধির জন্য হক্কানী পীর ধরার বহু গুরুত্ব রয়েছে। আত্মশুদ্ধির জন্য হক্কানী পীরের শরণাপন্ন হওয়া ঈমান-আমল ঠিক করে জান্নাতে যাওয়ার একটি সহজ রাস্তা। কিন্তু আত্মশুদ্ধির জন্য বাইআত হওয়া জরুরি নয়, উলামায়ে কেরাম বাইআত হওয়াকে সুন্নাত বলেছেন। যারা বলে, হক্কানী পীরের হাতে বাইআত না হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। তাদের কথা ভুল ও ভিত্তিহীন।
হক্কানী পীরের আলামত বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্নভাবে উল্লেখ আছে। ‘আহসানুল ফাতাওয়া’ কিতাবে নিম্নের কয়েকটি আলামত উল্লেখ আছে। যথা :
১. যিনি শরীয়তের পরিপূর্ণ পাবন্দি করেন, সুন্নাতের ওপর চলেন, নিজের পরিবারভুক্ত ব্যক্তিবর্গ ও মুরীদদেরকেও জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সুন্নাতের বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
২. প্রভাবশালী ও ধনীদের তুলনায় নেককার ও সত্যিকার উলামায়ে কেরাম তাঁর দিকে নিবিষ্ট হন ও তাঁর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখেন।
৩. যাঁর কাছে বসলে আল্লাহ তা’আলার স্মরণ, আখিরাতের ফিকির এবং দুনিয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।
৪. যাঁরা তাঁর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখেন তাঁরা অধিকাংশ যাহেরী ও বাতেনীভাবে শরীয়তের অনুসারী হন। (১২/৪৭৪/৩৯৯৮)