ইহুদী কর্তৃক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ওপর নির্যাতন!
প্রশ্ন : জনৈক খতীব গত ১৭ই এপ্রিল (২০০৯) শুক্রবারে খুতবার আগের দীর্ঘ বয়ানে একপর্যায়ে বলেন যে হযরত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা ৪ দিন অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। তখন ভাবলেন যে দেখি ফাতেমার বাসায় গিয়ে কোনো খাবার পাওয়া যায় কি না? তিনি মা ফাতেমার বাসায় গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আমার হাসান-হোসাইন কই? তখন ফাতেমা (রা.) বললেন, আব্বাজান আজ তিন দিন আমার বাড়িতে চুলা জ্বলে না, হাসান-হোসাইন ক্ষুধার দরূন জ্বালাতন করছিল তাই তাদের খেলতে পঠিয়েছি। এ কথা শুনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের অভুক্ত থাকার কথা আর না বলে বাড়িতে গেলেন, এই চিন্তা করে যে দেখি কোনো খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায় কি না? কিছুদূর গিয়ে দেখেন একজন ইহুদী কূপ থেকে পানি উঠাচ্ছে। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন যে ভাই, আমি আপনার পানি উঠিয়ে দেই আমাকে আপনি কিছু মজুরি দেবেন। তখন প্রতি বালতি পানি উঠানোর জন্য ৩-৪টি খেজুর দেওয়ার শর্তে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি উঠাতে শুরু করেন। কিন্তু নবম বালতি উঠানোর সময় দড়ি ছিঁড়ে বালতি কূপের মধ্যে পড়ে যায়। এমন সময় উক্ত ইহুদী এসে জিজ্ঞেস করল, আমার বালতি কোথায়? তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন যে বালতি দড়ি ছিঁড়ে কূপের মধ্যে পড়ে গেছে। তখন সে নবীজিকে চপেটাঘাত করে। তারপর যে কয় বালতি পানি উঠানো হয়েছিল তার মজুরি হিসাব করে দিয়ে দেয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্থান ত্যাগের আগে তাঁর পাগড়ী মোবারক কুয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে দেন এবং বালতিটা উঠে আসে। তা দেখে ইহুদী লোকটা বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগল ইনি খুব বুজুর্গ ব্যক্তি মনে হয়, আমি তো ভীষণ অন্যায় করেছি।
প্রশ্ন হলো, খতীব সাহেব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা আদৌ বাস্তব কি না? কারণ যে সময় এই ঘটনা ঘটে তখন কি আরবে এমন কোনো ব্যক্তি ছিল যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে চিনত না। যার ফলে একটি সাধারণ ঘটনার কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওই সময় একজন অমুসলিম কর্তৃক শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। এ ধরণের বয়ান শোনার পর অধিকাংশ মুসল্লিদের ভেতর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যেহেতু আমরা আলেম না, তাই আপনার নিকট বিশেষ অনুরোধ, উপরোক্ত কাহিনী কতটুকু সত্য, তা জানাবেন।
উত্তর : নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ব্যাপারে বিনিময়ে ইহুদীর পানি উত্তোলন করে বালতি পড়ে গেলে নবীজিকে শারীরিক নির্যাতন করার উক্ত ঘটনাটি কোনো নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে পাওয়া যায়নি। বরং হযরত আলী (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে তিনি সামান্য কিছু খেজুরের পরিবর্তে এক ইহুদীকে পানি উত্তোলন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও চপেটাঘাত করা ও পাগড়ি দিয়ে বালতি উঠানোর কোনো ঘটনা নেই বিধায় এটি কাল্পনিক। নবী-রাসূলের মুজেযাসংক্রান্ত বহু ঘটনা কোরআন-হাদীস ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। এসব বাস্তব ঘটনা বাদ দিয়ে পুঁথি কাহিনীর বই থেকে জাল ও ভিত্তিহীন ঘটনা বয়ান করে মানুষকে আকৃষ্ট করা প্রকৃত কোনো আলেম থেকে আশা করা যায় না। মুসল্লিদের উচিত, খতীব সাহেবকে বিষয়ভিত্তিক সঠিক কোরআন-সুন্নাহের ব্যাখ্যা প্রদান করতে অনুরোধ করা। তাতেও সংশোধন না হলে বিকল্প খতীবের ব্যবস্থা করা। (১৬/৩৭৩/৬৫২৫)
Tag:নির্যাতন!